ইকমার্স শিল্পের ২০টি চিত্তাকর্ষক পরিসংখ্যান ২০২১

ecommerce statistics

কোনো শিল্পকে কেন্দ্র করে বাণিজ্যিক উদ্যোগ গ্রহণের পূর্বে, সেই শিল্পটি সম্পর্কে যথাযথ গবেষণা করা অতি জরুরী। ইকমার্স শিল্পের ক্ষেত্রেও বিষয়টি ব্যতিক্রম নয়।

এতে শিল্পটি আপনার জন্য কতটুকু উপযুক্ত হতে পারে, তা সম্পর্কে ধারণা পেতে সহজ হয়ে যাবে। উদ্যোগ গ্রহণের পূর্বে যে বিষয়গুলো আপনার জেনে নেয়া উচিত তা হলঃ

ইত্যাদি।

ইন্টারনেটের সহায়তায় ও গবেষণার মাধ্যমে উল্লেখিত এই তথ্যগুলো আপনি চাইলেই জানতে পারেন। 

বিষয়টিকে আরও সহজ করতে এই নির্দেশিকায়, বিশ্বের নানা গবেষণা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে ইকমার্স শিল্পের চিত্তাকর্ষক কিছু পরিসংখ্যান তুলে ধরা হল। যার দ্বারা আপনি উল্লেখিত প্রশ্নগুলোর উত্তর অনুমান করতে সক্ষম হবেন।

 

নির্দেশিকাটিতে বিশ্বব্যাপী গ্রাহক ও বাণিজ্যিক সংস্থাগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে, ইকমার্স শিল্পের পরিসংখ্যানগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

কারণ ইকমার্সের মাধ্যমে সমগ্র দেশের পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ রয়েছে। তাছাড়া উন্নয়নশীল দেশগুলো উন্নত দেশগুলোকেই সচরাচর অনুসরণ করে থাকে।

ফলে যা আজ উন্নত দেশগুলোতে ঘটছে, তা আগামীতে উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও ঘটে।

 

উদাহরণ হিসেবে আমরা উবারকে দেখতে পাই,

এটির কার্যক্রম প্রথমে উন্নত দেশগুলোতেই শুরু হয়েছিল যা পরবর্তীতে বিশ্বব্যাপী উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও অনুসরণ শুরু হয়।

আরও যেমন রয়েছে, ডিজিটাল আর্থিক লেনদেন (মোবাইল ব্যাংকিং), এমন আরও অনেক উদাহরণ রয়েছে।

তাই বিশ্বব্যাপী ইকমার্স শিল্পের অবস্থা সম্পর্কে ধারণা থাকলে, নতুন নতুন উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে আপনার বাণিজ্যটিকে উপযুক্ত পথনির্দেশনা প্রদান সহজ হয়ে উঠবে।

ইকমার্স পরিসংখ্যান

১। অনুমাণ করা হচ্ছে ২০২১ সাল নাগাদ বিশ্বব্যাপী ২.১৪ বিলিয়ন ডিজিটাল গ্রাহক সৃষ্টি হবে।

যা অনেক বড় অংকের সম্ভাব্য গ্রাহকের পরিমাণ।

digital buyers in biliyon
সূত্রঃ স্টেটিস্টা

বিশ্বে সর্বমোট জনসংখ্যার পরিমাণ আনুমানিক ৭.৮ বিলিয়ন, যার মধ্যে ২৫ শতাংশই অনলাইন শপিং ক্রিয়াকলাপের সাথে সম্পৃক্ত।

এখনো নানা দেশের বৃহৎ পরিমাণ জনসংখ্যার কাছে ইন্টারনেট উপলব্ধ নেই, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে। যতই ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রসার ঘটছে ততোই ডিজিটাল ভোক্তাদের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

যেহেতু প্রতি বছর বছর অনলাইনে গ্রাহকদের সংখ্যা বাড়ছে, তাই উদ্যোক্তাদের জন্য ইকমার্স প্রক্রিয়াটি হতে পারে একটি উপযুক্ত বাণিজ্যিক পন্থা।

২। ২০২১ সালে ইকমার্স প্রক্রিয়ায় খুচরো বিক্রয়ের পরিমাণ ৭.২ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সূত্রঃ স্টেটিস্টা

এক রকম বলা চলে, ইকমার্স ধীরে ধীরে সাধারণ বাণিজ্যিক প্রক্রিয়াকে (অফলাইন) পেছনে ফেলে দিচ্ছে।

উপরের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে ইকমার্স প্রক্রিয়ায় খুচরো বিক্রয়ের ঊর্ধ্বগতির হার, যা থেকে বোঝাই যাচ্ছে বাণিজ্যিক শিল্পের জন্য ইকমার্স কতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। 

যদিও কভিড-১৯ এর ফলে ২০২০ সালে নিম্নমুখী ছিল। তবে পরবর্তী বছর থেকে পূর্বের ন্যায় পুনোরায় বিক্রয়ের হার বৃদ্ধি হবে বলে পরিসংখ্যান সংস্থা স্টেটিস্টা তাদের প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছে।

৩। দেশের প্রায় ৯০% শতাংশ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের এখনো ইকমার্স অনলাইন স্টোর নেই

সমগ্র দেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকৃতির প্রায় কয়েক কোটি প্রতিষ্ঠান বা শপ হবে, কিন্তু অনলাইনে কয়টি প্রতিষ্ঠানের ইকমার্স ওয়েবসাইট বা অ্যাপ রয়েছে?

mirpur 1 dhaka market area

অনলাইনে উপলব্ধ ইকমার্স ওয়েবসাইট ও অ্যাপসের পরিমাণ এবং বাজারের বিক্রয়কেন্দ্রগুলোর পরিমাণ পর্যবেক্ষণ করলেই বোঝা যায়, দেশের এখনো প্রায় ৯০-৯৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠানেরই নিজস্ব ইকমার্স স্টোর নেই।

তাই উদ্যোক্তা ও বাণিজ্যিক সংস্থাগুলোর জন্য এটি একটি দারুণ সুযোগ হতে পারে অনলাইনে নিজেদের অবস্থানটি প্রতিষ্ঠা করার।

 

৪। ভোক্তাদের অনলাইনে ক্রয়ের অন্যতম কারণ সময় ও পরিশ্রম সাশ্রয়

reasons to shop online
সূত্রঃ কেপিএমজি

অনলাইনে শপিং-এর কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হল ২৪ ঘণ্টা কেনাকাটা করার সুবিধা, পণ্যের মূল্য ও সুবিধাগুলো সহজেই তুলনা করতে পারা, সহজেই একাধিক স্টোর ভিসিট করা। 

যা শারীরিকভাবে বাজারে ভিন্ন ভিন্ন স্টোরে যাওয়ার পরিশ্রম এবং সময় অপচয় রোধে ভোক্তাদের সহায়তা করে।

এক কথায়, অনলাইন শপিং সময় সাশ্রয়ী, সহজ ও একদম হাতের মুঠোয় প্রায় সকল পণ্য-সেবা উপলব্ধ।

৫। ৮১% ভোক্তা ক্রয় সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে পরিবার ও বন্ধুদের সুপারিশকে বেশী প্রাধান্য দিয়ে থাকে।

পরিবার ও বন্ধুরা সবসময় আমাদের ভালোটাই প্রত্যাশা করে, তাই পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে তাদের সুপারিশ সর্বাপেক্ষাই প্রাধান্য পায়। যেখানে প্রতিষ্ঠানগুলো সবসময় বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে প্রচারণা করতে থাকে। 

তাই অনলাইন ষ্টোরের ক্ষেত্রে সামাজিক প্রমাণ গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।

সৌভাগ্যক্রমে প্রযুক্তির সহায়তায় সহজেই সোসিয়াল প্রুফ বা সামাজিক প্রমাণ আপনার স্টোরে যুক্ত করার মাধ্যমে ভোক্তাদের বিশ্বাস অর্জন করতে পারেন।

আমাদের অ্যাডভান্স ইকমার্স প্রশিক্ষণে এ বিষয়গুলো বিস্তারিত দেখানো হয়েছে।

অনলাইন স্টোরের ক্ষেত্রে এই বিষয়টিতে সর্বাধিক সুবিধা পাওয়া যায়। কারণ ডিজিটাল ভোক্তা তার পরিবার/বন্ধুদের সুপারিশ করতে সহজেই পণ্যের লিঙ্কটি শেয়ার করতে পারে।

৬। ধারণা করা হচ্ছে ২০২১ সাল নাগাদ মোবাইল কমার্স-এ ডিজিটাল বিক্রয়ের পরিমাণ বেঁড়ে দাঁড়াবে ৭২.৯% শতাংশে

প্রতিটি ভোক্তার কাছে কম্পিউটার না থাকলেও মোবাইল সকলের কাছেই রয়েছে। যার ফলে মোবাইলে শপিং এর হার উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

নিম্নের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে প্রতিবছর মোবাইল কমার্সের ঊর্ধ্বগতির হার।

mobile retail sales
সূত্রঃ স্টেটিস্টা

ওল্ফগ্যাং ডিজিটালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৫৫% শতাংশ ক্রয় মোবাইল ডিভাইসের ভোক্তা দ্বারা হয়ে থাকে। 

এজন্যই ইকমার্স ওয়েবসাইটটি হওয়া উচিত সম্পূর্ণ মোবাইল স্ক্রিন বান্ধব। যেন ডেক্সটপ বা মোবাইল যেকোনো ডিভাইস থেকে ভোক্তারা সহজে পণ্য-সেবা গ্রহণ করতে পারে।

 ওয়েবসাইটের পাশাপাশি একটি পৃথক ডেডিকেটেড মোবাইল শপিং অ্যাপ ব্যবসার দ্রুত প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। 

মোবাইলে ব্যবহারকারীরা ওয়েবসাইট ভিসিট করা থেকে নেটিভ অ্যাপের ব্যবহার করতে বেশী স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। কারণ নেটিভ অ্যাপগুলো বিশেষ করে মোবাইলের জন্য অপটিমাইজ থাকে। যার ফলে ভোক্তারা মোবাইল ডিভাইসে বিশেষ শপিং অনুভূতি পায়।

নিম্নের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে প্রতিবছর মোবাইল শপিং অ্যাপ ব্যবহারের বৃদ্ধির হার।

mobile shopping app users
সূত্রঃ স্টেটিস্টা

ইকমার্স বিশেষজ্ঞদের মতে প্রায় ৫৩% শতাংশ ডিজিটাল ভোক্তা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব শপিং অ্যাপে ক্রয় করতে বেশী স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। এতে প্রতিষ্ঠানের প্রতি ভোক্তাদের বিশ্বাসযোগ্যতাও বৃদ্ধি পায়।

তাহলে কোনটি সর্বাপেক্ষা বেশী জরুরী? ইকমার্স ওয়েবাইট, নাকি মোবাইল অ্যাপ?

প্রকৃতপক্ষে দুটিই সমানভাবে জরুরী। কারণ বাণিজ্য পরিচালনায় প্রতিষ্ঠানকে অভ্যন্তরীণ নানা কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হয়।

যেমন পণ্য লিস্টিং, অর্ডার ব্যবস্থাপনা, ভোক্তা/কর্মকর্তা ব্যবস্থাপনা, গ্রাহকসেবাসহ এ যাবতীয় অভ্যন্তরীণ কাজগুলো মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে করতে প্রচুর সময়ের অপচয় হতে পারে। 

মোবাইল অ্যাপ মূলত ওয়েবসাইটের লাইট/হাল্কা সংস্করণ, যার মাধ্যমে ভোক্তারা সহজেই তাদের অর্ডার/পেমেন্ট/আকাউন্ট ব্যবস্থাপনা করতে সক্ষম হবে।

আর ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান তাদের কার্যক্রম ব্যবস্থাপনা করবে। 

পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করলে এক কথায় বলা চলে,

মোবাইলের এই বিপুল পরিমাণ ডিজিটাল ভোক্তাদেরকে ক্রয়ের সহজ ও আনন্দদায়ক পন্থা প্রদানে প্রতিটি উদ্যোগের ওয়েবসাইটের পাশাপাশি নিজস্ব মোবাইল শপিং অ্যাপ থাকাও বর্তমানে অতি জরুরী।

ইকমার্স মোবাইল অ্যাপ

web development company in bangladesh
 

৭। AOV-তে ডেস্কটপ অন্যান্য ডিভাইসের শীর্ষে রয়েছে

কভিড-১৯ লকডাউন চলাকালীন সময়ে কিবোকমার্সের প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, উচ্চ মূল্যের দ্রব্য অর্ডারের ক্ষেত্রে ডেস্কটপ ডিভাইসই শীর্ষে রয়েছে।

order value by device
সূত্রঃ কিবোকমার্স

ডেক্সটপে ভোক্তাদের গড় অর্ডার পরিমাণ ১২২ ডলার, মোবাইলে ৮৪ ডলার ও টেবলেটে ৮৯ ডলার।

যেমনঃ একটি ৳৫০০ টাকা মূল্যের পণ্য অর্ডারে ভোক্তা সাধারণত তেমন চিন্তা করে না। কিন্তু ৳১০,০০০ টাকা মূল্যের একটি পণ্য অর্ডারে ভোক্তা যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করে চেকআউট করে থাকেন, যেন অর্ডার করার সময় অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল থেকে বিরত থাকা যায়। তাই উচ্চমূল্যের পণ্যের ক্ষেত্রে ডেক্সটপের ব্যবহার এখনো শীর্ষে।

এছাড়াও গ্রাহক রূপান্তরের হার মোবাইল ডিভাইসের তুলোনায় ডেক্সটপ ডিভাইসে অধিক। নিম্নের চিত্রে ২০১৯-২০২০ সালে নানা ডিভাইসে গ্রাহক রূপান্তর হার দেখা যাচ্ছে।

conversion_rate_kibocommerce
সূত্রঃ কিবোকমার্স
 

৭। AOV-তে ডেস্কটপ অন্যান্য ডিভাইসের শীর্ষে রয়েছে

ডিজিটাল বিপণন সংস্থা ওয়েবএফএক্স এর সূত্রমতে, প্রায় ৮৯% শতাংশ ভোক্তা মন্দ UI/UX এর কারণে অন্যান্য সহজে ব্যবহারযোগ্য প্রতিযোগীদের স্টোরে চলে যায়।

এছাড়াও বলা হয় ওয়েবসাইটের পেশাদার নকশা দ্বারা তাৎক্ষনিকভাবে ভোক্তাদের ৭৫% বিশ্বাস অর্জন করা সম্ভব।

UI = ওয়েবসাইট/অ্যাপের নকশা (ডিজাইন)

UX = ওয়েবসাইট/অ্যাপটির ব্যবহার কতটা ব্যবহারকারী বান্ধব?

UX এর একটি উদাহরণ হিসেবে চেকআউট পৃষ্ঠাটিকে ধরা যেতে পারে।

ইকমার্স ষ্টোরের ক্ষেত্রে চেকআউট পৃষ্ঠাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ক্রয় ধাপ। যে ধাপে শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় তথ্যগুলোই থাকা উচিৎ। 

চেকআউট পৃষ্ঠায় অতিরিক্ত ফর্ম ফিল্ডের ব্যবহারে ভোক্তা বিরক্ত হতে পারে এবং গ্রাহক রূপান্তর হার উল্লেখ্যযোগ্য হারে কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 

উদাহরণ হিসেবে GrowBig এর চেকআউট পৃষ্ঠাটি লক্ষ্য করুন।

GrowBig_checkout

শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় তথ্যের ফর্ম ফিল্ডগুলোই যুক্ত রয়েছে, যেন গ্রাহকারা অত্যন্ত সহজ চেকআউট অভিজ্ঞতা পায়। 

যেহেতু আমাদের সকল পণ্য-সেবাগুলো ডিজিটালি সরবরাহ করা হয়, তাই তা বিতরণে শিপিং ঠিকানা সংগ্রহের প্রয়োজন নেই। 

আপনি যদি ফিজিক্যাল পণ্য বিক্রয় করে থাকেন সেক্ষেত্রেও প্রয়োজন নেই এমন ফিল্ডগুলোকে বাদ দেয়ার মাধ্যমে চেকআউট পৃষ্ঠাটির UX আরও উন্নত করতে পারেন। 

উকমার্স শপিং কার্ট সফটওয়্যারে বিষয়টি সহজেই করা সম্ভব। বিস্তারিত শিখতে আমাদের ফ্রি উকমার্স প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করা যেতে পারে।

 

৯। ৭৬% শতাংশ ভোক্তা পুনোরায় ক্রয়ে আগ্রহী হয় যদি পণ্য ফেরত প্রক্রিয়া সহজ থাকে

ইকমার্সের অন্যতম একটি নেতিবাচক দিক হল সরাসরি পণ্য হাতে নিয়ে যাচাই করার সুবিধা না থাকা। ফলে বিশেষ ধরণের কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে ফেরত প্রদান ও গ্রহণের প্রয়োজন হতে পারে। 

বিতরণ সংস্থা নার্ভারের একটি পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে,

যেসকল ষ্টোর সহজে পণ্য ফেরতের প্রক্রিয়া প্রদান করে, সেসকল স্টোর থেকে ভোক্তারা বার বার ক্রয়ে বেশী আগ্রহী হয়, তাদের মধ্যে একটি নিশ্চয়তা কাজ করে।

customer retention
সূত্রঃ নার্ভার

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ৭৪% শতাংশ ভোক্তা ফ্রি শিপিং উপলব্ধ না থাকলে ক্রয়ে আগ্রহী হয় না। ৬৩% শতাংশ ভোক্তা অন্য স্টোরে চলে যায় যদি ফেরত নীতিমালা সুস্পষ্টভাবে ওয়েবসাইটে উল্লেখ্য না থাকে।

তাই ফ্রিতে পণ্য বিতরণ ও তার নীতিমালা সুস্পষ্ট রাখার মাধ্যমে গ্রাহক রূপান্তর হার অনেকাংশে বৃদ্ধি করা সম্ভব।

১০। মন্দ গ্রাহকসেবার কারণে ৮০% ভোক্তা পুনোরায় ক্রয়ে বিরত থাকে

বিশ্বাস অর্জন করা কঠিন ও সময় সাপেক্ষ, কিন্তু তা হারানো অত্যন্ত সহজ।

একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায় যেসকল প্রতিষ্ঠান শুধুমাত্র বিক্রয়ের চেষ্টা করে,

কিন্তু ভোক্তাদের যথাযথ বিক্রয় পরবর্তী গ্রাহকসেবা প্রদান করে না, তাদের থেকে পরবর্তীতে সেই ভোক্তা পুনোরায় ক্রয়ে উৎসাহী হয় না।

 

কেননা ভোক্তা কোনো পণ্য বা সেবা গ্রহণের সময় বিক্রয় পরবর্তী সহায়তা কামনা করে। 

তাই যেকোনো বাণিজ্যিক উদ্যোগে বিক্রয় পরবর্তী গ্রাহকসেবাকে গুরুত্বের সাথে নেয়া উচিত।

যদি আপনার গ্রাহকরা পুনোরায় ক্রয়ে ফিরে না আশে তাহলে আপনার পক্ষে বাণিজ্যটির টেকসই উন্নয়ন করা সম্ভব হবে না, সর্বদা নতুন গ্রাহকদের পেছনে ছুটতে হবে।

অনলাইন স্টোরের ক্ষেত্রে গ্রাহকসেবা সফটওয়্যারের মাধ্যমে সহজেই বিক্রয় পরবর্তী গ্রাহকসেবা ডিজিটালি প্রদান করা যায়।

১১। দ্রুতগতি সম্পন্ন অনলাইন স্টোরে গ্রাহক রূপান্তরের হার সর্বাপেক্ষা বেশী

ধীরগতির ওয়েবসাইট ভিসিট করা যে কতটা বিরক্তিকর তা নতুন করে বলার কিছু নেই।

পোর্টেন্টের সূত্রমতে, যেসকল ওয়েবসাইট ০-৪ সেকেন্ডের মধ্যে লোড হয় সেসকল ষ্টোরের গ্রাহক রূপান্তর হার ৩১.৭৯% – ১২.৭৬% শতাংশ। অর্থাৎ ১০০ ভোক্তা ভিসিট করলে ৩১-১৩ জন ক্রয় করে।

Goal-Conversion-Rates_4.0_portent
সূত্রঃ পোর্টেন্ট

বিশেষ করে স্টোরের প্রচ্ছেদ পৃষ্ঠা, পণ্য বিস্তারিত পৃষ্ঠা ও চেকআউট প্রক্রিয়ায় গতি বৃদ্ধিতে গুরুত্ব আরোপের বিষয়টি উল্লেখ্য করা হয়। কারণ অনলাইন ষ্টোরের এসকল পৃষ্ঠাসমূহে ভোক্তারা সর্বাধিক ভিসিট করে থাকে।

ওয়েবসাইটের গতি নির্ভর করে হোস্টিং সার্ভারের মানের উপর। যেমন আমাদের GrowBig ওয়েবসাইটের গতি বৃদ্ধিতে ভিপিএস সার্ভারস্টেকপাথ সিডিএনের ব্যবহার হচ্ছে।

সিডিএন হল কন্টেন্ট ডেলিভারি নেটওয়ার্ক। যার ব্যবহারে ওয়েবসাইটের গতি কয়েকগুন বৃদ্ধি করা যায়। 

স্টেকপাথের বিশ্বব্যাপী কয়েকশত সার্ভার রয়েছে। সিডিএন সংযুক্ত করলে সেই প্রতিটি সার্ভারে ওয়েবসাইটের হুবহু প্রতিলিপি (কপি) তৈরি হয়। ভিসিটর যখন সাইট ভিসিট করে তখন তার সর্বাপেক্ষা নিকটবর্তী সার্ভার থেকে ওয়েবসাইটের কন্টেন্টগুলো লোড হয়। 

যেমনঃ ২ জন ভিসিটর একই সাথে সাইটে ভিসিট করছে, একজনের অবস্থান বাংলাদেশ ও অন্যজনের অবস্থান যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশের ভিসিটরের জন্য বাংলাদেশের নিকটবর্তী সার্ভার ও যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্রের সার্ভার থেকে কন্টেন্টগুলো লোড হবে। 

একইভাবে, একই সাথে ১০জন ভিসিট করলে ১০ জনের জন্য তাদের নিকটবর্তী ভিন্ন ভিন্ন সার্ভার থেকে সাইটটি লোড হবে। ফলে একটি সার্ভারের উপর চাপ সৃষ্টি না হয়ে সেটি একাধিক মিরর (আয়নার মত) সার্ভারে চাপ সৃষ্টি হয়। যার কারণে ওয়েবসাইটের গতি অত্যন্ত বেঁড়ে যায়।

যার মাসিক ব্যয়ঃ

ভিপিএস সার্ভারঃ ৳৬,৬২৫

সিডিএনঃ ৳৯০০

১২। স্বল্প বয়সী ভোক্তারা বয়স্ক ভোক্তাদের তুলনায় অনলাইন শপিং এ বেশী সময় ব্যয় করে থাকে।

ইউরোষ্টেটের জরিপে দেখা যায় স্বল্প ও মধ্যবয়সী ভোক্তাদের মাঝে অনলাইন শপিং সর্বাধিক জনপ্রিয়। নিম্নের চিত্রে বিগত ১০ বছরের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

shopping by age
সূত্রঃ ইউরোষ্টেট
 

১৩। কভিড-১৯ এর ফলে অনলাইন ষ্টোরগুলোতে অতিরিক্ত ২২ বিলিয়ন ভিসিট হয়েছে

কভিড-১৯ এর ফলে ভোক্তারা এক রকম অনলাইন স্টোরগুলোর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল।

লকডাউনে প্রায় সকল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীই স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত সময় অনলাইনে সক্রিয় ছিল।

জরিপে দেখা গিয়েছে, জানুয়ারি ২০১৯ থেকে জুন ২০২০ এর মাঝে অনলাইন স্টোর গুলোতে সাধারণের থেকে অতিরিক্ত ২২ বিলিয়ন ভিসিট হয়েছে। 

এছাড়াও সফটওয়্যার অ্যাডভাইসের সূত্রমতে, বিশ্বব্যাপী প্রায় ২৫% শতাংশ খুচরো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান তাদের ব্যবসাকে অনলাইনে স্থানান্তর করেছে।

retailers launched ecommerce stores statistics
সূত্রঃ সফটওয়্যার অ্যাডভাইস

কিছু পণ্যের ক্ষেত্রে কভিড-১৯ এর ফলে বিক্রয় হার কয়েকশতগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। যেমন ভাইরাস দমন সংশ্লিষ্ট পণ্যসামগ্রী। এছাড়াও অনলাইনে গ্রসারি বিক্রয়ের ক্ষেত্রেও বড় ধরণের ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা গিয়েছে।

যেসকল উদ্যোক্তা অনলাইনে বিক্রয় কার্যক্রমে সম্পৃক্ত ছিল তারা ঠিকই কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পেরেছে।

এমনকি কভিড-১৯ লকডাউন সময়কালে হোম ডেলিভারি আরও দ্রুতগতিতে প্রদান করা সম্ভব হয়েছিল যানবাহন বন্ধের কারণে।

ফলে যেখানে সাধারণ অনলাইফ স্টোরগুলোর বিক্রয় পরিমাণ প্রায় শূন্যে নেমে গিয়েছিল, সেখানে ইকমার্স উদ্যোক্তাদের রোজগার কয়েকগুলো বেঁড়ে গিয়েছিল।

যা থেকে অনেক বড় একটি শিক্ষা গ্রহণ করা যেতে পারে।

কখনো সঠিক সময়ের অপেক্ষায় সময় অপচয় করতে নেই, সবসময় প্রস্তুত থেকে সমস্যাকে সুযোগ হিসেবে দেখা উচিত।

১৪। ইকমার্স শিল্পে সর্বাধিক জনপ্রিয় ক্যাটাগরির শীর্ষে ফ্যাশন

২০১৮ সালে প্রকাশিত নিলসনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফ্যাশন ক্যাটাগরিটি ইকমার্স শিল্পে সর্বাধিক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

ইকমার্স প্রক্রিয়ায় বিক্রিত সমস্ত ক্যাটাগরির মধ্যে ফ্যাশন ক্যাটাগরির অংশ ৬১% শতাংশ। 

বিশ্বব্যাপী ৫৭% শতাংশ ডিজিটাল ভোক্তা ফ্যাশন ক্যাটাগরির কোনো না কোনো পণ্য ক্রয় করেছেন, যা এই ক্যাটাগরিকে সর্বাধিক জনপ্রিয়তার খেতাব এনে দিয়েছে।

১৫। বি২বি ইকমার্সের উন্নয়ন হার বি২সি এর তুলনায় অধিক

ডিজিটাল কমার্স ৩৬০ এর জরিপ মতে ইকমার্স প্রক্রিয়ায় বি২বি বিক্রয় বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১৮% শতাংশে।

যা বি২সির থেকে ৩% শতাংশ বেশী ছিল।

ঊর্ধ্বগতিটি ঘটেছে সকল ডিজিটাল বিক্রয় মাধ্যমের সমন্বয়ে,

যেমন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ব্যক্তিগত ইকমার্স ওয়েবসাইট, অ্যামাজান/আলিবাবা মার্কেটপ্লেসসহ অন্যান্য দেশ ভিত্তিক অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোতে।

বি২বিঃ

বি২বি প্রক্রিয়ায় শুধুমাত্র বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো একে অন্যের সাথে ক্রয়-বিক্রয় করে থাকে। যেমন পাইকার ও খুচরো বিক্রেতারা নিজেদের মধ্যে যখন ক্রয়-বিক্রয় করেন তখন সেই বাণিজ্যিক লেনদেনকে বি২বি বলা হয়। কারণ লেনদেনটি বিজনেস টু বিজনেস হচ্ছে।

বি২সিঃ

বি২সি প্রক্রিয়ায় খুচরো বিক্রেতারা সরাসরি প্রান্তিক গ্রাহকদের কাছে বিক্রয় করে থাকেন, যারা কোনো প্রতিষ্ঠান নয়।

 

১৬। অনলাইন শপিং ইন্টারনেটে অন্যান্য সকল ক্রিয়াকলাপের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয়

shopping app uses
সূত্রঃ থিংক উইথ গুগল

গুগলের সূত্রমতে প্রতি ২ জন স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর ১ জনের ফোনে শপিং অ্যাপ ইন্সটল রয়েছে এবং সপ্তাহে ন্যূনতম একবার হলেও ব্যবহার করে থাকে।

২০১৮ সালে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা প্রতিদিন অনলাইনে মাথাপিছু গড়ে ৩৯ মিনিট ব্যয় করেছে, যা ২০২১ সাল নাগাদ বেঁড়ে ১৫৫ মিনিটে দাঁড়াবে বলে সংশ্লিষ্ট গবেষণা সংস্থাগুলো ধারণা করছে।

উল্লেখিত এই সময়ের মধ্যে ভোক্তারা অনেকটা সময় অতিবাহিত করে থাকে পণ্য নিয়ে গবেষণা, সঠিক পণ্যের সন্ধান, ক্রয় সম্পন্ন করাসহ শপিং সংশ্লিষ্ট নানা কাজে। 

যার ফলে অনলাইনের সমস্ত ক্রিয়াকলাপের মধ্যে শপিং অন্যতম জনপ্রিয়।

১৭। বিক্রয়ের পরিমাণের ভিত্তিতে চীন সর্ববৃহৎ ইকমার্স বাজার

প্রতিবছর ইকমার্স শিল্প থেকে চীনের ৬৭২ বিলিয়ন ডলার উপার্জন হয়ে থাকে। চীনের সকল খুচরো বিক্রয়ের প্রায় ১৫.৯% শতাংশই আশে ইকমার্স শিল্প থেকে।

দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও পর্যায়ক্রমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে যুক্তরাজ্য।

১৮। শিপিং খরচ ক্রয় সিদ্ধান্তে ভোক্তাদের মাঝে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে

এ বিষয়ে ক্লাচ ৫০০ ডিজিটাল ভোক্তাদের উপর একটি জরিপ চালায়।

যেখানে দেখা যায়, অতিরিক্ত হিসেবে শিপিং খরচ যুক্ত করলে ভোক্তাদের মাঝে দ্বিধা সৃষ্টি হয়। 

 

যেমন উদাহরণ হিসেবে, ভোক্তা ৳১০০০ টাকার একটি পণ্য নির্বাচনের পর ৳১০০০ টাকাই পরিশোধের প্রত্যাশা করে।

কিন্তু চেকআউট করার সময় যখন দেখতে পায় শিপিং খরচ হিসেবে অতিরিক্ত ১০০ টাকা যুক্ত হচ্ছে তখন সেটি তাৎক্ষনিকভাবে তার ক্রয় সিদ্ধান্তে বাঁধা সৃষ্টি করে।

 

জরিপে ৪৩% শতাংশ ভোক্তা বলেছেন অতিরিক্ত শিপিং খরচ থাকলেও তারা ক্রয় করেন। 

আর ৭৭% শতাংশ ভোক্তা বলেছেন ফ্রি শিপিং থাকলে ক্রয়ে বেশী আগ্রহী হন।

যা থেকে বোঝা যায় শিপিং খরচে ক্ষুদ্র পরিবর্তন আনার ফলে বিক্রয়ের পরিমাণ প্রায় দ্বিগুন হারে বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

 

এজন্যই অনেক অনলাইন স্টোর বর্তমানে পণ্যের মূল্যের সাথেই শিপিং খরচ সংযুক্ত করে নেয়।

ফলে ভোক্তা পণ্যে যে মূল্য দেখতে পায়, সেই মূল্যেই চেকআউট করতে পারে।

এতে ভোক্তার মধ্যে চেকআউট করার সময় কোন দ্বিধা সৃষ্টি হয় না।

১৯। ২৮.৭ শতাংশ ডিজিটাল ভোক্তা অর্গানিক সার্চের মাধ্যমে ইকমার্স স্টোর ভিসিট করে থাকে।

সিমিলারওয়েবের পরিসংখ্যান মতে, ইকমার্স ষ্টোরে ভোক্তারা সরাসরি ভিসিটের পাশাপাশি পরবর্তী দ্বিতীয় মুখ্য মাধ্যম হিসেবে সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার দ্বারা ভিসিট করে থাকে।

সংখ্যাটি পেইড সার্চ বিজ্ঞাপনের তুলনায় অধিক, পেইড সার্চ বিজ্ঞাপনের ক্লিক হার ৪.৩% শতাংশ।

ফলে ইকমার্স ষ্টোরে অর্গানিকভাবে ভোক্তা পেতে এসইও একটি সাশ্রয়ী প্রচার মাধ্যম হতে পারে।

 

সার্চ ইঞ্জিনগুলোর মধ্যে গুগল ১ নম্বর অবস্থানে রয়েছে, যার বাজার শেয়ার প্রায় ৯২.০৫% শতাংশ।

অর্থাৎ কোনো বিষয় সন্ধানে প্রতি ১০ জনে ৯ জনই গুগলের সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করে।

তাই গুগলের পরামর্শ অনুযায়ী অনলাইন স্টোরটি এসও বান্ধব করা হলে গুগল সার্চ থেকে বিনামূল্যেই নতুন নতুন ভোক্তা পাওয়া সম্ভব।

ইয়োস্ট এসইও প্লাগিনটির সহায়তায় কিভাবে একটি ওয়েবসাইটকে সার্চ ইঞ্জিন বান্ধব করা যেতে পারে সে বিষয়টি শিখতে ভিডিও নির্দেশিকাটি দেখুন।

 

২০। উকমার্স বিশ্বের সর্বাধিক জনপ্রিয় ইকমার্স শপিং কার্ট সফটওয়্যার

সমগ্র বিশ্বের শীর্ষ ১০ লক্ষ ইকমার্স ওয়েবসাইটের উপর চালিত বিল্টউইথের একটি পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে, শপিং কার্ট সফটওয়্যার হিসেবে উকমার্স শীর্ষে রয়েছে।

popular shopping cart
সূত্রঃ বিল্টউইথ
popular shopping cart 2

পর্যায়ক্রমে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে শপিফাই (১৮%), তৃতীয় অবস্থানে মেজেন্টো (৯%) এবং অন্যান্য সকল সফটওয়্যার মিলে ৪২%।

স্টেটিস্টার পরিসংখ্যানেও বিষয়টি উঠে এসেছে।

woocommerce shopping cart market share
সূত্রঃ স্টেটিস্টা

যেখানে দেখা যাচ্ছে ২০২০ সালে শীর্ষ ১০টি শপিং কার্ট সফটওয়্যারকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। যার মধ্যে ২৮.২৪% শতাংশে উকমার্স ১ নম্বর অবস্থানে রয়েছে।

 

২১। ৫৫% শতাংশ ডিজিটাল ভোক্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম দ্বারা ক্রয় করেছে

ডিজিটাল ভোক্তাদের প্রায় ৫৫% শতাংশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম দ্বারা একবার হলেও দ্রব্য ক্রয় করেছেন (যেমন ফেইসবুক, ইউটিউব, ইন্সটাগ্রাম)। 

উল্লেখিত মাধ্যমগুলো ভোক্তাদের সংস্পর্শে আসতে সহায়তা করে। আর ওয়েবসাইট দ্বারা দ্রব্য, অর্ডার, গ্রাহক ও কর্মকর্তাদের কেন্দ্রীয়ভাবে একই স্থান থেকে ব্যবস্থাপনা করা যায়। 

 

তাই প্রায় সকল অনলাইন ব্র্যান্ড সামাজিক মাধ্যমগুলো ব্যবহারের পাশাপাশি, 

বাণিজ্যের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রমগুলো সহজেই পরিচালনায় নিজস্ব অনলাইন স্টোর ব্যবহার করে থাকে।

বাণিজ্যের প্রসারে ফেইসবুকের বিপণন পন্থাগুলো শিখতে আমাদের ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করা যেতে পারে।

সারসংক্ষেপঃ

উল্লেখিত পরিসংখ্যানগুলো পর্যালোচনা করলে সহজেই অনুমান করা যায়, ইকমার্স হল বর্তমান ও ভবিষ্যতের আধুনিক বাণিজ্য পরিচালনার মাধ্যম। 

ইকমার্সের উন্নয়ন ধারা নিম্নমুখী হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই দেখা যাচ্ছে না, বরং দিন দিন এর জনপ্রিয়তা ও চাহিদা আরও বাড়ছে।

যদিও আমাদের দেশের বাণিজ্যিক শিল্পে ইকমার্সের ব্যবহার শুরু হয়েছে মাত্র কয়েক বছর হল।

তবে বিশ্ব বাজারগুলো পর্যালোচনা করলে সহজেই অনুমান করা যায়, ভবিষ্যতে এর পরিধি আমাদের দেশেও উল্লেখ্যযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেতে যাচ্ছে।

সেরা ডোমেইন নাম নির্বাচনের প্রক্রিয়া

domain registration in Bangladesh

আপনার বাণিজ্যটিকে অনলাইনে খুঁজে পাওয়ার থেকেও একটি ডোমেইন নাম অধিক অর্থ বহন করে। উদ্যোগটির ব্র্যান্ড পরিচিতি গ্রাহকদের কাছে তুলে ধরতে ডোমেইন নাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

গ্রাহকরা আপনার ডোমেইন নামটি শোনার পর তাদের মধ্যে কি ধরণের অনুভূতি সৃষ্টি হবে?

নামটি কি আপনার সরবরাহকৃত পণ্য-সেবাগুলোর বর্ণনা করে?

এসইও বান্ধব কিওয়ার্ড যুক্ত ডোমেইন নাম নির্বাচন করা উচিত, নাকি ব্র্যান্ডেবল নাম?

ডোমেইন নাম নিবন্ধন করা অত্যন্ত সহজ হলেও, নিবন্ধনের পূর্বে কিছু বিষয় অবশ্যই আপনার মনে রাখা উচিত। এই নির্দেশিকায় বাণিজ্যিক উদ্যোগের জন্য কিভাবে একটি উপযুক্ত ডোমেইন নাম নির্বাচন করা যেতে পারে, সেই বিষয়টি আলোচনা করা হয়েছে।

ফ্রি ডোমেইন

হোস্টগেটর হোস্টিং সেবার সাথে বিনামূল্যে .com ডোমেইন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। কিভাবে হোস্টিং এর সাথে ফ্রি ডোমেইনটি নিবন্ধন ও সেটআপ করতে হয় তা শিখতে ভিডিও নির্দেশিকাটি দেখুন।

 

উপযুক্ত ডোমেইন নাম নির্বাচন

সেরা একটি ডোমেইন নামের সন্ধান পেতে নিম্ন বর্ণিত ৫টি বিষয় আপনার অনুসরণ করা উচিত।

১। আকারে ছোট, স্মরণীয় ও ব্র্যান্ডেবল নাম

যদি ইতিমধ্যেই আপনি একটি বাণিজ্যের সত্ত্বাধিকারী হয়ে থাকেন তাহলে সেই বাণিজ্যটির নাম অনুযায়ী ডোমেইন নিবন্ধনের চেষ্টা করুন। এতে গ্রাহকদের পক্ষে আপনার ব্যবসাটিকে খুঁজে পেতে ও ওয়েবাইটের সাথে ব্যবসাটি সংযুক্ত করতে সহজ হবে।

অন্যথায় নতুন উদ্যোগ শুরুর ক্ষেত্রে, এমন একটি নাম নির্বাচন করুন, যা সংক্ষিপ্ত, সহজেই মনে রাখার মত ও ব্র্যান্ডেবল।

 

নাম নির্বাচনে লক্ষণীয়ঃ

উদাহরণ হিসেবে GrowBig নামটি লক্ষ্য করুন। এটি উচ্চারণে সহজ, ৮ অক্ষরের নাম, সহজ শব্দ এবং ইতিবাচক অর্থ বহন করে এবং কার্যক্রমের সাথে নামটির সম্পৃক্ততা রয়েছে।

 

ব্র্যান্ডেবল নাম বলতে কি বোঝায়?

আমরা সকলেই জানি দীর্ঘমেয়াদী সাফল্যে ব্র্যান্ডিং এর গুরুত্ব কতটা। কিন্তু কোন বিষয়গুলো একটি ডোমেইনকে ব্র্যান্ডেবল করে তোলে?

এখানে অনেকগুলো বিষয় লক্ষণীয়, তবে তার মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিম্নরূপঃ

 

২। হাইপেন (-) ও নম্বর (4) ব্যবহারে বিরত থাকুন

মানুষ টাইপিং-এ স্বাভাবিকভাবে প্রায়ই ভুল করে থাকেন, কিছুটা সতর্কতা অবলম্বণের মাধ্যমে আপনার ডোমেইন নামটির ভুল টাইপিং-এ গ্রাহকদের বিরত রাখতে পারেন।

এর জন্য সর্ব প্রথম করণীয় হল, ডোমেইন নামে হাইপেন (-) ও নম্বরের (4) মিশ্রণ ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা। এগুলোর ব্যবহারে গ্রাহকদের মাঝে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হতে পারে।

যেমন, ডোমেইন নামে “for” এর পরিবর্তে “4” ব্যবহার করা, বা myshop-4u.com ব্যবহার করা। মোবাইল ভিসিটরদের জন্যও এই ধরণের ওয়েবসাইট ভিসিট করা জটিল হয়ে যায়। 

কেননা মোবাইল কিবোর্ডে শব্দ ও নম্বর ব্যবহার করতে বার বার সুইচ/পরিবর্তন হতে হয়। যা গ্রাহকদের জন্য বিরক্তিকর একটি বিষয় হতে পারে।

যে বিষয়গুলো এড়িয়ে চলা উচিতঃ

যদিও ক্ষেত্রবিশেষ নম্বর ও শব্দের মিশ্রণ হতে পারে। 

যদি ইতিমধ্যেই আপনার নম্বর ও শব্দের মিশ্রণে কোন প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ড নাম থেকে থাকে যেমন twenty4.com এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই নামে পৃষ্ঠাসমূহ থেকে থাকে, সেক্ষেত্রে নামটি ব্র্যান্ডেবল ও ব্যবহারযোগ্য।

৩। .com ডোমেইন নির্বাচন করুন

ইন্টারনেটে ডট কমকে ওয়েবসাইটের ডিফল্ট ডোমেইন নাম হিসেবে ধরা যেতে পারে। কারণ, এর জনপ্রিয়তা ও বিশ্বাসযোগ্যতা। প্রায় ৮০% বাণিজ্যিক সংস্থা এই টিএলডিটি ব্যবহার করছে।

টিএলডি (টপ লেভেল ডোমেইন) = ডোমেইনের এক্সটেনশনকে বোঝায় যেমন .com, .net, .org ইত্যাদি।

এছাড়াও স্মার্টফোনগুলোর কিবোর্ডে .com নামে একটি বাটন থাকে, যা ব্যবহারকারীদের সহজেই টাইপ করতে সাহায্য করে। 

তাই আপনার উদ্যোগটির জন্যও ডট কম ডোমেইন নির্বাচন করা উপযুক্ত হবে। 

হোস্টগেটরে হোস্টিং প্ল্যানের সাথে ডট কম ডোমেইন বিনামূল্যেই পেতে পারেন, এবিষয়ক নির্দেশিকাটি দেখে নিন।

যেহেতু ডট কম অত্যধিক জনপ্রিয় একটি টিএলডি,

তাই ডট কমে পছন্দের নামটি পাওয়া যথেষ্ট কষ্টসাধ্য ব্যাপার হতে পারে।

 

যদি ইংরেজি শব্দে আপনার নির্বাচিত নামটি ডট কমে পাওয়া না যায়,

সেক্ষেত্রে বাংলা শব্দ দ্বারা সন্ধান করা যেতে পারে। যেমনঃ

ইংরেজি শব্দঃ yourshop.com

বাংলা শব্দঃ apnardokan.com

বাংলা শব্দ বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত না হওয়ায় ফলে পছন্দের ডোমেইন নামটি পাওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকবে।

 

.com এর পাশাপাশি আরও জনপ্রিয় কিছু টিএলডি রয়েছেঃ

.shop ও .store – এই টিএলডিগুলো ডট কমের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে যা ইকমার্স উদ্যোগের ক্ষেত্রে সর্বাধিক উপযুক্ত। কারণ নামগুলো দ্বারা ওয়েবসাইটের কার্যক্রম সুস্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে।

.trade – এই টিএলডিটি বিটুবি বাণিজ্যিক উদ্যোগের ক্ষেত্রে উপযুক্ত, বিশেষ করে পাইকার বিক্রেতা বা যারা শুধুমাত্র বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে কার্যক্রম পরিচালনা করে। সরাসরি খুচরো গ্রাহকদের সাথে লেনদেন করে না।

.org – এই টিএলডিটি অলাভজনক সংস্থাগুলোর ক্ষেত্রে উপযুক্ত।

.net – যেসকল সংস্থা নেটওয়ার্ক সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছেন তাদের জন্য এই টিএলডিটি সর্বাধিক উপযুক্ত। যেমন ইন্টারনেট সেবাদানকারী সংস্থা। যদিও যেকোনো সংস্থা চাইলে টিএলডিটি ব্যবহার করতে পারে, ব্যবহারে কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই।

এছাড়াও আপনার উদ্যোগটির কার্যক্রম যদি শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কোনো দেশে পরিচালিত হয়, সেক্ষেত্রে সিসিটিএলডি ব্যবহার করতে পারেন। সিসিটিএলডির উদাহরণঃ

বাংলাদেশঃ .bd

ভারতঃ .in

যুক্তরাষ্ট্রঃ .us

সংযুক্ত আরব আমিরাতঃ .ae

GrowBig-এর জন্য আমরা .bd সিসিটিএলডি ব্যবহার করছি। কারণ এর কার্যক্রমের প্রধান ভোক্তা বাংলা ভাষাভাষী।

৪। ডোমেইন নাম জেনারেটর টুলসের ব্যবহার করুন

অনুমান করে নাম সন্ধান করা সম্ভব নয়। তাই সম্ভাব্য নামের তালিকা সহজেই খুঁজে পেতে ডোমেইন সন্ধান টুলসের ব্যবহার করা যেতে পারে। 

অনলাইনে নানা ফ্রি নাম সন্ধান টুলস রয়েছে যার ব্যবহারে আপনার উদ্যোগটির জন্য নামের ধারণা পেতে পারেন।

তেমনই কিছু টুলস নিম্নরূপঃ

৫। নির্বাচিত নামটি যাচাই করুন

কিভাবে জানবেন নির্বাচিত নামটি পূর্বে ব্যবহৃত হয়েছে কিনা?

যদি আপনার নির্বাচিত ডোমেইন নামটি পূর্বে কেউ ব্যবহার করে থাকে সেক্ষেত্রে সেটি ব্যবহার না করাই ভালো। কারণ পূর্বে ডোমেইনটি স্পেমিং, পাইরেসি বা এ জাতীয় কোনো কাজে ব্যবহার হতে পারে। 

এই ধরণের ডোমেইনকে গুগল ব্ল্যাকলিস্ট তালিকায় ফেলে দেয়, ফলে গুগল সার্চে এ ধরণের ডোমেইন নাম প্রদর্শিত হয় না। 

তাই এ ধরণের ঝামেলা এড়াতে নির্বাচিত ডোমেইন নামটি পূর্বে কারো দ্বারা ব্যবহৃত হয়েছে কিনা সেটি পর্যবেক্ষণ করা জরুরী।

who.is ফ্রি টুলটি ব্যবহার করে ডোমেইনের হিস্টরি পর্যবেক্ষণ করা যেতে পারে। যেমন সর্বপ্রথম কবে নিবন্ধন হয়েছিল, সর্বশেষ কবে নিবন্ধন হয়েছে, কে বা কারা নিবন্ধন করেছিল এ যাবতীয় তথ্য। 

যদি কোনো হিস্টরি না থাকে তার মানে ডোমেইনটি একদম নতুন এবং নিরাপদ।

 

কি করা উচিত যদি আপনার ডোমেইন নামটি ইতিমধ্যেই নিবন্ধিত হয়ে থাকে?

১। নিবন্ধনকারী থেকে ক্রয়ের চেষ্টা করুন

ডোমেইন ক্রয়-বিক্রয় অনলাইনে জনপ্রিয় একটি বাণিজ্যিক পন্থা। অনেকেই ভালো নামের ডোমেইন ক্রয় করে রেখে তা অনেক গুন বেশী দামে বিক্রয় করে। 

আপনার নির্বাচিত নামটি যদি পূর্বেই কেউ নিবন্ধন করে ফেলে এবং ক্রয়ের জন্য উপলব্ধ থাকে সেক্ষেত্রে তার থেকে আপনি নামটি ক্রয় করে নিতে পারেন। 

তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই যাচাই করে নিতে হবে ডোমেইনটি পূর্বে কোন স্পেমিং/পাইরেসি সম্পর্কিত কাজের সাথে সম্পৃক্ত ছিল কিনা।

২। নামের সমাহার ব্যবহার করুন

নির্বাচিত নামটি ইতিমধ্যেই নিবন্ধিত হয়ে গেলে নামের অন্যান্য সমাহারের ব্যবহারে অনুরূপ শব্দ খোঁজার চেষ্টা করুন।

যেমন ওয়েবসাইট যদি খুচরো স্টোর হয় তাহলে hateybona.com নামটির বদলে buyhateybona.com ব্যবহার করা যেতে পারে। নিম্নের সূত্রটি ব্যবহার করা যেতে পারে।

[shop or buy] + [brandname] = [your domain name]

অথবা

[brandname] + [shop or buy] = [your domain name]

উপরে উল্লেখিত নামের সন্ধান টুলসগুলোর ব্যবহারে নামের এমন সমাহার সন্ধান করা যেতে পারে।

৩। অন্যান্য টিএলডি সন্ধান করুন

যদি কোনো ভাবেই ডট কম ডোমেইন নাম পাওয়া না যায়,

সেক্ষেত্রে সিসিটিএলডি ডোমেইন ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমনঃ

Hateybona.com.bd

Hateybona.in

hateybona.ae

 

ডোমেইন নাম নিবন্ধন করার পদ্ধতি

হোস্টগেটর হোস্টিং এর সাথে ফ্রিতে .com ডোমেইন নিবন্ধন করতে প্রথমে যেকোনো একটি প্ল্যান নির্বাচন করুন।

hostgator hosting plan
হোস্টিং প্ল্যান

পরবর্তী চেকআউট পৃষ্ঠায় আপনার নির্বাচিত ডোমেইন নামটি সন্ধান করুন ও উপলব্ধ থাকলে টিক দিয়ে সকল তথ্য পূরণ করুন।

HostGator_checkout_page
ডোমেইন সন্ধান ও মূল্য পরিশোধ

অতিরিক্ত অ্যাডঅন সেবাগুলো আন-টিক দিন এবং মূল্য পরিশোধের মাধ্যমে অর্ডারটি সম্পন্ন করুন।

 

ডোমেইন নামের প্রতিযোগীমূলক সুবিধা

ডোমেইন নাম শুধুমাত্র অনলাইনে আপনার ব্যবসাটিকে খুঁজে পাবার ঠিকানা নয়, বরং এটি ডিজিটাল দুনিয়ায় আপনার ব্র্যান্ডের অবস্থান ও পরিচিতি প্রতিষ্ঠায় সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। 

তাই পর্যাপ্ত সময় নিয়ে একটি উপযুক্ত নাম নির্ধারণ করা উচিত। 

ডোমেইন নামটি অত্যধিক স্বয়ংসম্পূর্ণ বা সর্বসেরা হতে হবে এমন নয়। সহজ, সাধারণ বা সাবলীল একটি নাম আপনার ব্র্যান্ডটির প্রতিষ্ঠা ও বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনে যথেষ্ট।

 

ডোমেইন সংশ্লিষ্ট প্রশ্নউত্তর

সর্বপ্রথম .com নির্বাচনের চেষ্টা করুন, ডট কম টিএলডিতে না পেলে সিসিটিএলডিতে নির্বাচন করা উপযুক্ত হবে (উদাহরণ .bd, .in, .ae ইত্যাদি)।

কেউই ডোমেইন নাম স্থায়ীভাবে ক্রয় করতে পারে না। এটি একটি রিকারিং ভিত্তিক পণ্য যা প্রতি বছর বছর নবায়ন করে যেতে হবে।

১। সহজ, সংক্ষিপ্ত ও ব্র্যান্ডেবল নাম বাছাই করুন।

২। হাইপেন (-), নম্বরের (4) মিশ্রণ ব্যবহারে বিরত থাকুন।

৩। নাম জেনারেটর টুলস ব্যবহার করুন।

৪। নির্বাচিত ডোমেইনটি যাচাই করুন

৫। পরিশেষে নামটি নিবন্ধন করুন

 

উপসংহার

ডোমেইন নাম নির্বাচনের ক্ষেত্রে সম্ভাব্য যে বিষয়গুলো লক্ষ্যণীয় তা এই নির্দেশিকাটিতে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে, যার অনুসরণে আশা করি আপনার উদ্যোগটির জন্য চমৎকার একটি নাম নির্বাচনে সক্ষম হবেন।

ওয়েবসাইটের জন্য কোন ধরণের হোস্টিং সার্ভার উপযুক্ত?

hosting guides

সম্প্রতি আমাদের একজন পাঠক জানতে চেয়েছেন তার ওয়েবসাইটের জন্য কোন ধরণের হোস্টিং সার্ভার উপযুক্ত হতে পারে।

এই লেখাটিতে জানা যাবে হোস্টিং সার্ভার কি, সার্ভারের ধরণ, মূল্য ও কোন ক্ষেত্রে কোন সার্ভারটি উপযুক্ত হতে পারে।

প্রথমেই জানা যাক ডোমেইন সম্পর্কেঃ

ডোমেইন হল ওয়েবসাইটের নাম, যা সাধারণত প্রতিষ্ঠানের নাম হয়ে থাকে। যার দ্বারা ক্রেতারা আপনার প্রতিষ্ঠানে অনলাইনে ভিসিট করতে পারবে এবং সরবরাহকৃত পণ্য-সেবাগুলোর বিস্তারিত জানতে ও অর্ডার করতে পারবে।

ডোমেইন মূল্যঃ 

ডোমেইনের মূল্য নির্ধারণ হয় তার টিএলডি (top-level domain) এর উপর ভিত্তি করে। যেমনঃ .com টিএলডির মূল্য ৳৯০০-৳১৫০০, আবার .store টিএলডি-এর মূল্য  ৳৪৫০০-৳৫০০০।

web hosting server
প্রকৌশলী সার্ভার কনফিগার করছেন

হোস্টিং সার্ভার কি?

হোস্টিং সার্ভার মূলত ওয়েব ভিত্তিক কম্পিউটার। যার মধ্যে থাকা তথ্যসমূহ ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক দ্বারা আদান-প্রদান করা যায়। যেমনঃ ছবি, টেক্সট, ভিডিওসহ অন্যান্য ফাইলসমূহ।

কেন হোস্টিং সার্ভার প্রয়োজন পড়ে?

ওয়েবসাইটের ফাইলসমূহ সংরক্ষণ করতেই হোস্টিং সার্ভারের প্রয়োজন হয়। 

ওয়েব হোস্টিং সার্ভার হল ওয়েবসাইটের স্টোরেজ (ফোন মেমোরি কার্ডের মত), যেখানে ওয়েবসাইটের সকল তথ্য/ফাইল সংরক্ষিত থাকে এবং সেই ফাইলগুলো ওয়েবসাইটির মাধ্যমে পরিচালনা করা যায়।

যেমনঃ নতুন ফাইল যুক্ত করা, সম্পাদনা করা, ফাইল/তথ্য মুছে ফেলা ইত্যাদি।

আমরা যখন ফেইসবুকে কোন ছবি/লেখা প্রকাশ করি, তখন তা ফেইসবুকের হোস্টিং সার্ভারে সংরক্ষণ হয়, যেখান থেকেই সেই কন্টেন্টগুলো আমাদের প্রোফাইলসহ অন্যান্যদের প্রোফাইলে প্রদর্শন হতে থাকে।

facebook browsing
ফেইসবুক ব্যবহার

হোস্টিং সার্ভারের মূল্যঃ

নিজস্ব হোস্টিং সার্ভার সেটআপ ও ব্যবস্থাপনা করতে বৃহৎ বিনিয়োগ ও প্রযুক্তির প্রয়োজন। তাই প্রায় ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রেই ভাড়ায় চালিত হোস্টিং সার্ভারে ওয়েবসাইট বা ওয়েব অ্যাপ হোস্ট করা হয়। 

হোস্টিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের সার্ভার ভাড়া নেয়া যায়। যার মূল্য সার্ভার কনফিগারেশন উপর নির্ভরশীল।

কম্পিউটার বা মোবাইলের কনফিগারেশনের উপর ভিত্তি করে যেমন তার মূল্য নির্ধারিত হয়। ঠিক হোস্টিং সার্ভারের খেত্রেও বিষয়টি এক।

সার্ভার কনফিগারেশন যত বেশি হয়, মূল্যও তথ্য বেশি হয়। আর, কনফিগারেশন যত শক্তিশালী হয়, ওয়েব অ্যাপের গতি ও কর্মক্ষমতাও ততো বেশি হয়। 

হোস্টিং সার্ভারের ধরনঃ

 সাধারণত ৪ ধরনের হোস্টিং সার্ভার সর্বাধিক জনপ্রিয় ও ব্যবহৃত।

১। শেয়ারড হোস্টিং

২। ক্লাউড হোস্টিং

৩। ভিপিএস সার্ভার

৪। ডেডিকেটেড সার্ভার

এছাড়াও ওয়ার্ডপ্রেস সফটওয়্যারটি সর্বাধিক ব্যবহৃত ও জনপ্রিয় হওয়ায় রয়েছে ম্যানেজড ওয়ার্ডপ্রেস ও উকমার্স হোস্টিং।

১। শেয়ারড হোস্টিং

ওয়েবসাইট হোস্ট করার সবচেয়ে সাশ্রয়ী মাধ্যম হল শেয়ারড হোস্টিং।

একটি শেয়ারড হোস্টিং সার্ভারে অনেকগুলো ব্যবহারকারী/ওয়েবসাইট হোস্ট করা থাকে, যার জন্যই এই ধরণের সার্ভারকে শেয়ারড হোস্টিং সার্ভার বলা হয়।

সার্ভারের রিসোর্সগুলো একাধিক ব্যবহারকারী বা ওয়েবসাইটের মাঝে বণ্টন হয়, ফলে কোন একটি ওয়েবসাইটে অতিরিক্ত রিসোর্স ব্যবহৃত হলে বা হটাৎ ভিসিটর বেড়ে গেলে, সেই সার্ভারে হোস্ট করা অন্যান্য ওয়েবসাইটের উপর তার প্রভাব পড়ে।

shared web hosting growbig
শেয়ারড হোস্টিং সার্ভার উদাহরণ

উপরের ছবিতে দেখা যাচ্ছে, একজন তার ওয়েবসাইটে অতিরিক্ত রিসোর্স ব্যবহার করায়, অন্যান্য ব্যবহারকারীরা রিসোর্স কম পাচ্ছে (র‍্যাম, প্রসেসর, ব্যান্ডউইথ, স্টোরেজ ইত্যাদি)।

শেয়ারড হোস্টিং কোন ক্ষেত্রে উপযুক্ত?

যেকোনো ব্যবসা/উদ্যোগের অনলাইন পরিচিতি প্রতিষ্ঠায় ওয়েবসাইট প্রয়োজন, তবে গ্রাহকরা মাঝে মাঝে সাইট ভিসিট করবে, সব সময় সাইটে একাধিক ভিসিটর থাকবে না, সেসকল ওয়েবসাইটের ক্ষেত্রে শেয়ারড হোস্টিং উপযুক্ত।

আনুমানিক ব্যয়ঃ ৳২৫০ – ৳৬৫০/মাসিক

২। ক্লাউড হোস্টিং

ক্লাউড হোস্টিও উল্লেখিত শেয়ারড হোস্টিং এর মতই, যা একাধিক ব্যবহারকারীরা একই সাথে ব্যবহার করে থাকে। 

তবে এর কনফিগারেশন প্রচলিত শেয়ারড সার্ভারের চেয়ে উন্নত থাকে। ফলে ওয়েবসাইটের গতি ও কর্মক্ষমতাও দ্রুতগতির হয়। 

আরও একটি উল্লেখিত পার্থক্য হল, অন্যান্য প্রচলিত সার্ভারগুলোর মত ওয়েবসাইট বা অ্যাপটি সুনির্দিষ্ট একটি ফিজিক্যাল সার্ভারে সংরক্ষণ করা হয় না। বরং একটি নেটওয়ার্ক দ্বারা সংযুক্ত ফিজিক্যাল ও ভার্চুয়াল ক্লাউড সার্ভারে চালিত হয়।

এতে করে সার্ভারের কার্যক্ষমতা বেশী থাকে। এছাড়াও সার্ভারের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে সার্ভার পরিবর্তন না করেই প্রয়োজন অনুযায়ী সার্ভারের কনফিগারেশন যেকোনো সময় বৃদ্ধি/কমানো যায়।

ক্লাউড হোস্টিং কোন ক্ষেত্রে উপযুক্ত?

  • প্রচলিত বাণিজ্যিক ও ই-কমার্স ওয়েবসাইট
  • যেসকল ওয়েবসাইটে একই সাথে একাধিক ভিসিটর/গ্রাহক ভিসিট করবে।
  • পণ্য/সেবা ক্রয়/বিক্রয় হবে।
  • সার্ভার পরিবর্তন না করেই, চাহিদা মত রিসোর্স বৃদ্ধির সুবিধা পেতে।

আনুমানিক ব্যয়ঃ ৳৯২৫ – ৳১৩৭৫/মাসিক

৩। ভিপিএস হোস্টিং

ভিপিএস সার্ভারেও একাধিক ব্যবহারকারী থাকে। তবে ভিপিএস সার্ভারের রিসোর্স প্রত্যেকটি ব্যবহারকারীর জন্য সুনির্দিষ্ট থাকায়, ব্যবহারকারীর সাইটটি সুনির্দিষ্ট পরিমাণ রিসোর্স ব্যবহার করতে পারে। ফলে শেয়ারড সার্ভারের এর চেয়ে ভিপিএস বেশী শক্তিশালী হয়ে থাকে।

GrowBig ওয়েবসাইটের জন্য বর্তমানে GrowBig এর ভিপিএস সার্ভার ব্যবহার করা হচ্ছে।

growbig vps hosting server
ভিপিএস হোস্টিং সার্ভার উদাহরণ

উপরের ছবিতে দেখা যাচ্ছে প্রতিটি ব্যবহারকারীর জন্য সুনির্দিষ্ট রিসোর্স বরাদ্ধ রয়েছে, কেউ নির্ধারিত রিসোর্সের বেশী ব্যবহার করতে পারবে না। ফলে প্রত্যেকেই সার্ভারের সমান কার্যক্ষমতা পাচ্ছে এবং একজনের জন্য অন্যের ওয়েবসাইটের কার্যক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে না।

ভিপিএস হোস্টিং কোন ক্ষেত্রে উপযুক্ত? 

  • যেসকল ওয়েবসাইটে একই সাথে একাধিক গ্রাহক ভিসিট করে। 
  • সার্ভারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন 
  • ই-কমার্স বা ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন (ওয়েব অ্যাপ)
  • যাদের সুনির্দিষ্ট সার্ভার কনফিগারেশন প্রয়োজন
  • যাদের দ্রুতগতিসম্পন্ন ওয়েবসাইট প্রয়োজন

অসুবিধাঃ 

  • ওয়েব সার্ভার ব্যবস্থাপনার ন্যূন্নতম অভিজ্ঞতা প্রয়োজন (যদি সিপ্যানেল না থাকে)
  • সিপ্যানেল (সার্ভার ব্যবস্থাপনা সফটওয়্যার) আলাদাভাবে ক্রয়ের প্রয়োজন হয় বা হতে পারে
  • শেয়ারড ও ক্লাউড সার্ভারের থেকে মূল্য বেশী হয়ে থাকে

আনুমানিক ব্যয়ঃ ৳১,৩০০ – ৳৬,৫০০/মাসিক

 ৪। ডেডিকেটেড হোস্টিং

ডেডিকেটেড হোস্টিং সার্ভার হল সর্বাধিক ক্ষমতাসম্পন্ন। এ ধরনের সার্ভারে ওয়েবসাইট বা ওয়েব অ্যাপ অত্যন্ত দ্রুতগতি ও কার্যক্ষমতাসম্পন্ন হয়ে থাকে।

কারণ সম্পূর্ণ সার্ভার বা কম্পিউটারটি শুধুমাত্র একজন ব্যবহারকারীর জন্য বরাদ্দ থাকে। ফলে সার্ভারের সম্পূর্ণ রিসোর্স একাই ব্যবহার করা যায়।

নিম্নের ছবিতে দেখা যাচ্ছে প্রতিটি ব্যবহারকারী পৃথক ডেডিকেটেড সার্ভার ব্যবহার করছে, যেখানে অন্য কোনো ব্যবহারকারী বা ওয়েবসাইট হোস্ট করা নেই।

dedicated hosting server

ডেডিকেটেড সার্ভার কোন ক্ষেত্রে উপযুক্ত?

  • ই-কমার্স ও অন্যান্য ওয়েব অ্যাপ
  • অত্যন্ত দ্রুতগতিসম্পন্ন ওয়েবসাইট কার্যক্ষমতা পেতে।
  • যেসকল ওয়েবসাইটে/অ্যাপে একই সাথে বা সর্বদাই অত্যধিক গ্রাহক ভিসিট করে।
  • অন্যের সাথে সার্ভারের অংশীদারিত্ব না করতে চাইলে।

অসুবিধাঃ

  • অন্যান্য সার্ভারের তুলনায় মূল্য অনেক বেশী হয়ে থাকে। 

আনুমানিক ব্যয়ঃ ৳৬,৫০০ – ৳৩০,০০০/মাসিক

বিশ্বব্যাপী সেরা কিছু হোস্টিং সেবাদানকারী সংস্থা

Bluehost জনপ্রিয় এবং নির্ভরযোগ্য একটি হোস্টিং প্রতিষ্ঠান, যেখানে নানা ধরণের হোস্টিং সার্ভার উপলব্ধ রয়েছে। 

যেমনঃ শেয়ারড হোস্টিং, ওয়ার্ডপ্রেস হোস্টিং, উকমার্স হোস্টিং, ভিপিএস ও ডেডিকেটেড সার্ভার। বিশেষ করে ওয়ার্ডপ্রেস ও উকমার্স সফটওয়ারের জন্য ব্লুহোস্ট সর্বাধিক জনপ্রিয়।

HostGator-ও ব্লুহোস্টের মতই জনপ্রিয় হোস্টিং সেবাদানকারী সংস্থা। যেখানে শেয়ারড হোস্টিং, ওয়ার্ডপ্রেস হোস্টিং, ভিপিএস ও ডেডিকেটেড সার্ভার উপলব্ধ রয়েছে।

সর্বাধিক সুলভ মূল্যের শেয়ারড হোস্টিং সার্ভারের জন্য নেমচিপ বিখ্যাত। নেমচিপ ও হোস্টগেটরে প্রায় একই ধরণের সার্ভার উপলব্ধ রয়েছে। তবে নেমচিপের ভিপিএস ও ডেডিকেটেড সার্ভারের ক্ষেত্রে সিপ্যানেল পৃথকভাবে ক্রয়ের প্রয়োজন।

সর্বশেষ পরামর্শঃ

শেয়ারড হোস্টিং এর কার্যক্ষমতা সকল স্থানেই প্রায় এক। যদি সাইটে সবসময় তেমন একটা ভিসিটর না থাকে, শুধুমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক তথ্যগুলোর অনলাইন প্রদর্শনে ওয়েবাইট প্রয়োজন, সে ক্ষেত্রে শেয়ারড হোস্টিং ব্যবহার করা যেতে পারে।

তবে ইকমার্স এর ক্ষেত্রে ব্লুহোস্টের উকমার্স হোস্টিং বা হোস্টগেটরের ভিপিএস সার্ভার নেয়া যেতে পারে। এতে গ্রাহকরা স্টোর ব্রাউজিং-এ দারুণ অভিজ্ঞতা পাবে।

সফটওয়ার সংস্থা হিসেবে আমাদের গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী নানা ধরণের হোস্টিং সার্ভার ব্যবহারের প্রয়োজন হয়। সেই অভিজ্ঞতার আলোকেই নির্দেশনাটি প্রকাশ করা, যা আশা করছি আপনার ওয়েবসাইট তৈরিতে সহায়ক হবে।

ধন্যবাদ!